সরকারের ভ্যাট বৃদ্ধি অযৌক্তিক ও অন্যায়-যশোর চেম্বার অব কমার্স

- আপডেট সময় : ০১:১৬:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫ ৪৬ বার পড়া হয়েছে
এবার ভ্যাট বৃদ্ধির প্রতিবাদে ফুঁসে উঠলেন যশোরের ব্যবসায়ীরা। সব ব্যবসায়ী একাট্টা হয়ে সাফ জানিয়ে দিলেন সরকারের ভ্যাট বৃদ্ধি অযৌক্তিক ও অন্যায়। রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করতে হলে যাদের ভ্যাট দেয়ার সামর্থ্য আছে কিন্তু দেন না, তাদের ভ্যাটের আওতায় আনার পরামর্শ যশোরের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের। দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিতে হলে তাদের ভ্যাটের আওতায় আনতে হবে, যারা ভ্যাট দেন না। আমরা যারা নিয়মিত ভ্যাট দিচ্ছি, তাদের ঘাড়ে ভ্যাটের বোঝা চাপানো অন্যায় ও অযৌক্তিক দাবি এসব ব্যবসায়ীদের।
আজ সোমবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টায় নিজস্ব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন যশোর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান।
সাধারণ সম্পাদক তানভীরুল ইসলাম সোহানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা নেতারা শত পণ্যের ভ্যাট বৃদ্ধির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সরকারকে এই হঠকারী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহবান জানানো হয়।
লিখিত বক্তব্যে মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘গত ৯ জানুয়ারি নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক ও আবগারি শুল্ক বৃদ্ধি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। এতে ওষুধ, এলপিজি, রেস্তোরাঁর খাবার, মোবাইল ফোন সেবা, ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে।
তিনি বর্তমান সরকারের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘উচ্চ মূল্যস্ফীতি জনগণের জন্য চাপ সৃষ্টি করেছে। এর ওপর ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে গরীব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের টিকে থাকা কঠিন হবে। রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে অন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে তিনি বলেন, ‘অনেক ব্যবসায়ী রয়েছেন যারা ভ্যাট দেন না। কিন্তু তাদের ভ্যাট দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে। সরকার তাদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায়ের ব্যবস্থা করতে পারে। এতে করে ভোক্তার উপর তেমন প্রভাব পড়বে না’ বলে তিনি মন্তব্য করেন ক্লিন ইমেজের এই চেম্বার নেতা।
চেম্বারের নেতারা দাবি করেন, ভ্যাট বৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মেনে নেয়ার ফল। এতে দেশের অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়নের স্বাধীনতা খর্ব হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, এখন মোবাইল রিচার্জ ও ইন্টারনেট ব্যবহারে কর বেড়ে গেছে। আপেল, কমলা ও মাল্টার ওপর করভার বেড়েছে ১৫ টাকা। ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের করভার বেড়েছে ৭ টাকা। এমনকি এক প্যাকেট ফ্রেসিয়াল টিস্যুর কর ৪ টাকা বেড়ে ৭-৮ টাকা দাঁড়িয়েছে।
ব্যবসায়ীরা ভ্যাট বৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি, জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও অর্থনৈতিক নীতির স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-সহ-সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, যুগ্ম সম্পাদক মকছেদ আলী ও এজাজ উদ্দিন টিপু, ব্যবসায়ী নেতা সঞ্জয় চৌধুরী, এস কে আজাদ প্রমুখ।
ব্যবসায়ীরা আক্ষেপ করে বলেন, জুলাই-আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের স্থলে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর জনকল্যাণমুখী অর্থনীতি গড়ে তোলার প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু আইএমএফের শর্ত মেনে নেয়া এবং পূর্ববর্তী সরকারের বাজেট বহাল রাখায় সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। চলমান পরিস্থিতিতে ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধির কারণে দেশের অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ, তাদের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণে হিমসিম খাচ্ছেন। ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা এ সংকট মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। চেম্বার নেতারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এক্ষেত্রে যশোরের ব্যবসায়ীরা একাট্টা। আম-জনতার স্বার্থ সংরক্ষণে ব্যবসায়ীরা সক্রিয় থাকবে বলেও জানানো হয়।